সংবাদ সম্মেলনে সিলেট বিভাগের ৪টি চেম্বারের নেতৃবৃন্দ

ব্যবসায়ীদের  পেটে লাতি মারছে লাফার্জ

ব্যবসায়ীদের  পেটে লাতি মারছে লাফার্জ
  • অসম বানিজ্য বন্ধে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা

শিল্পনগরী ছাতকের সুরমা নদীর তীরে অবস্থিত লাফার্জ হোলসিম সিমেন্ট কোম্পানি তাদের চুনাপাথর ক্রাশিং করে খোলাবাজারে বিক্রি বন্ধ না করলে একযোগে আন্দোলনে নামবেন বলে জানিয়েছেন সিলেট বিভাগের ৪টি চেম্বারের নেতারা। তারা অভিলম্বে অসম বানিজ্য বন্ধ করে সিলেটের ব্যবসায়ীদের ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।

বুধবার সিলেট নগরীর একটি হোটেলে আয়েজিত জনার্কীণ সংবাদ সম্মেলনে তারা এ আহবান জানিয়ে বলেছেন, অসম বানিজ্য করে লাফার্জ হোলসিম সিলেটের ক্ষুদ্র চুনাপাথর ব্যবসায়ীদের লাতি মারছে। 
ব্যবসায়ী শ্রমিক ঐক্য পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের আহবায়ক, ছাতক লাইমস্টোন ইম্পোর্টার্স এন্ড সাপ্লায়ার্স গ্রুপের প্রেসিডেন্ট ও সুনামগঞ্জে চেম্বারের পরিচালক আহমদ শাখাওয়াত সেলিম চৌধুরী।

এ সময় সিলেট বিভাগের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ চারটি সংগঠন দি সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, দি সুনামগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, দি মৌলভীবাজার চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ ও দি হবিগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ নেতৃবৃন্দ সংবাদ সম্মেলনে একাত্মতা পোষণ করেন।

লিখিত বক্তব্যে সেলিম চৌধুরী বলেন, চুনাপাথর ব্যবসার সাথে বৃহত্তর সিলেটের ছাতক, ভোলাগঞ্জ, তামাবিল, বড়ছড়া, বাগলিশুল্ক স্টেশনের হাজারহাজার ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা জড়িত। চুনাপাথর আমদানি ও বিক্রয়ের সাথে জড়িত ব্যবসায়ীরা সরকারকে বানিজ্যিকহারে ভ্যাট ও অগ্রিম টেক্স দিয়ে থাকেন। আর লাফার্জ উৎপাদনমুখি শিল্পের কাচামালের ঘোষণা দিয়ে অত্যন্ত কম ভ্যাট ও টেক্সে ট্রেডিং ব্যবসা শুরু করেছে। 
তিনি আরও বলেন, তারা সিমেন্ট উৎপাদন করেত এসেছে, চুনাপাথর ক্রাশিং করে বিক্রির জন্য নয়। ট্রেডিং ব্যবসার কোনো অনুমতি তাদের নেই। এমনকি পৌরসভার লে-আউট প্লান ও ট্রেড লাইসেন্সও নেই। অথচ প্রতিদিন এক লাখ ৮০ হাজার মেট্রিকট্রন চুনাপাথর ক্রাশিং করে ছাতক ঘাট থেকে বিক্রি করছে লাফার্জ। আগামিতে হয়তো তারা ৫ লাখ ঘনফুট বিক্রি করবে। এজন্য তারা জমি অধিগ্রহন ও মেশিন ক্রয় করেছে । 
বক্তব্যে বলা হয়, লাফার্জ কনভেয়ার বেল্টের মাধ্যমে বছরে ভারত থেকে ৫০ লাখ মে.টন চুনাপাথর ক্রয়ের লক্ষ্য নিয়েছে। এরমধ্যে মাত্র ১০ লাখ সিমেন্টের কাচামাল হিসেবে ব্যবহার করবে আর বাকি ৪০ লাখই ক্রাশিং করে খোলাবাজারে বিক্রি করবে। সিলেট বিভাগের ব্যবসায়ী মিলে বছরে ২০-২৫ লাখ মেট্রিকট্রন চুনাপাথর আমদানি করে থাকেন। এ ব্যবসায় ২ হাজার কোটি টাকা পুজি বিনিয়োগ করেছেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীদের প্রতিটনের খচর হয় ৩ হাজার ৭শ টাকা আর লাফার্জের বেল্টের মাধ্যমে নিয়ে আসতে খরচ হয় ১ হাজার ৭শ টাকা। এ অসম প্রতিযোগিতায় ব্যবসায়ীরা কিভাবে ঠিকবে। অতীতে ব্যর্থ হয়ে সর্বশেষ মহামারিকালে তারা অবৈধভাবে খোলাবাজারে পাথর বিক্রি শুরু করে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিষয়টি বিভিন্ন মন্ত্রনালয়, ব্যবসায়ীক নেতা, জেলার সংসদ সদস্যসহ সকলকে অবহিত করা হয়েছে। তার পরও ক্রাশিং করে খোলাবাজারে বিক্রি বন্ধ করছে না লাফার্জ। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন ব্যবসায়ীরা।

সংবাদ সম্মেলনে সিলেট চেম্বারের সভাপতি তাহমিদ আহমদ ও সাবেক সভাপতি এটিএম শোয়েব জানান, সিলেট থেকে ধীরে ধীরে বড় ব্যবসা তুলে নেওয়া হচ্ছে। একটি চক্র কৌশলে এসব করছে। কয়লার পর তারা এবার চুনাপাথর ব্যবসা বন্ধ করতে চাচ্ছে। এর আগে পাথর উত্তোলন বন্ধ করা হয়েছে।

তাহমিদ আহমদ বলেন, এভাবে চলতে থাকলে সীমান্তের সব ব্যবসা বন্ধ করে সিলেটবাসীকে বিদেশে গিয়ে অবস্থান করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, ছাতক পৌরসভার সাবেক মেয়র ও ব্যবসায়ী আব্দুল ওয়াহিদ মজনু, সিলেট চেম্বারের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি চন্দন সাহা, সুনামঞ্জ চেম্বারের পরিচালক খন্দকার মঞ্জুর আহমদ, এনামুল হক,  সিলেট চেম্বারের পরিচালক মুজিবুর রহমান মিন্টু, ফাহিম আহমদ চৌধুরী, কাজি মোস্তাফিজ, ব্যবসায়ী আবুল হাসান, অরুণ দাস, সৈয়দ আহমদ আলী, ভোলাগঞ্জ শুল্ক স্টেশনের সাহাব উদ্দিন, বশির আহমদ, তামাবিল শুল্কস্টেশনের সারওয়ার হোসেন সেদু, ইলিয়াস উদ্দিন লিপু, সুতারকান্দির শাহ আলম, জুয়েল আহমদ, জকিগঞ্জের হারুনুর রশিদ, আবুল কালাম, তাহিরপুরে আলা উদ্দিন খন্দকার প্রমুখ।

জেএস/বিজ্ঞপ্তি/এএসআর